আজান ও ইকামতে যা বলা হয়
আযান বা আজান (আরবি: أَذَان আযান্) হচ্ছে মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের জন্য ইসলামি আহ্বান বা ডাকধ্বনি। দিনের নির্ধারিত সময়ে একজন মুয়াজ্জিন আযান পাঠ করেন।
ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমানদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য দৈনিক পাঁচবার উচ্চস্বরে আযান দেওয়া হয়। ফরজ নামাজের উদ্দেশ্য মসজিদে প্রবেশের জন্য এটি মুসলিমদের প্রথম ডাকধ্বনি। ইকামত নামে পরিচিত দ্বিতীয় ডাকধ্বনিতে মসজিদে উপস্থিত থাকা লোকেদের নামাজের শুরুর জন্য লাইনে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। প্রতিটি মসজিদে একাধিক উচ্চস্বরে আযানের মূল উদ্দেশ্য হলো সকলের কাছে ইসলামি বিশ্বাসের সহজে বোধগম্য সারসংক্ষেপ উপলব্ধ করানো।
আজানের বাক্যগুলো
-
আল্লাহু আকবার ৪ বার
-
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ২ বার
-
আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ ২ বার
-
হাইয়া আল্লাস সালাহ ২ বার
-
হাইয়া আলাল ফালাহ ২ বার
-
আবার ‘আল্লাহু আকবার’ ২ বার এবং সবশেষে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ১ বার উচ্চারিত হয়।
ফজরের নামাজের আজানে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’র পর ‘আস সালাতু খাইরুম মিনাননাউম’ অর্থ: ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম’ ২ বার বলা হয়।
আজানের বাংলা অর্থ
-
আল্লাহ মহান
-
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’
-
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল’
-
নামাজের জন্য আসো
-
কল্যাণের জন্য আসো’
-
আল্লাহ মহান
-
আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’
নামাজের ইকামত
ফরজ নামাজের আগে ইমামের পেছনে দাঁড়ানোর পর মুয়াজ্জিন আবার আজান দেন। একে ইকামত বলা হয়।
ইকামতের বাক্যগুলো
-
আল্লাহু আকবার, (৪ বার)
-
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, (২ বার)
-
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ, (২ বার)
-
হাইয়া আলাস সালাহ, (২ বার)
-
হাইয়া আলাল ফালাহ (২ বার)
-
কদ কমাতিস সালাহ, (২বার)
-
আল্লাহু আকবার, (২ বার)
-
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (১ বার)।
ফরজ নামাজের ইকামতে পঞ্চম বাক্যের (হাইয়া আলাল ফালাহ) পর বলতে হয় কদ কমাতিস সালাহ, এর বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘জামাত প্রস্তুত’ (২ বার)।
ইসলামে আজানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আজান শুনে আজানের জবাব দেওয়ারও রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
আজান শ্রবণকারীরও মৌখিকভাবে আজানের উত্তর দেওয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা আজান শুনবে, এর জবাবে মুয়াজ্জিনের অনুরূপ তোমরাও বলবে।’ (বুখারি, হাদিস ৬১১)
আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি
আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি হলো, মুয়াজ্জিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই বাক্যটি নিজেও অনুরূপভাবে বলবে। কিন্তু মুয়াজ্জিন ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলার সময় শ্রোতা ‘লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ বলবে এবং ফজরের আযানে "আস্ সালাতু খাইরুম মিনান্ নাউম" বললে শ্রুতা এর জবাবে ‘সাদাকতা ও বারারতা’ পড়বে।। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৩৮৫)
আজানের মতো মুসল্লিদের একামতের জবাব দেওয়াও মুস্তাহাব। একামতের জবাবও আজানের অনুরূপ। শুধু একামতের মধ্যে ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ’-এর জবাবে’ ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’ বলবে।
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার হজরত বেলাল (রা.) একামত দিচ্ছিলেন, তখন নবী করিম (সা.)-ও তাঁর সঙ্গে আজানের অনুরূপ উত্তর দিয়েছেন, তবে ‘ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ’ বলার সময় বলেন, ‘আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা’। (আবু দাউদ, হাদিস ৫২৮)
মাওলানা নাজিম উদ্দিন
দ্বীনি ইসলাম, উমনপুর।